আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহর সীমানা ঘেঁষে স্থাপিত গ্রীক দেবী থেমিসের মূর্তি বসিয়ে দেয়া মানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া। দেবীর মূর্তি স্থাপন সংবিধান বিরোধী, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বোধ-বিশ্বাসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন এলাকায় এককভাবে থেমিস দেবীর মূর্তি স্থাপন করা মানে অনধিকার চর্চা, মূর্তিকে সার্বজনীনতা দেয়ার অপচেষ্টা, যা নৈতিকতা ও আইন বিরোধী, মূর্তি স্থাপন গণতন্ত্রের প্রতি চরম কুঠারাঘাত,দেবীর স্থাপন সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক।
এই মূর্তি দেশ, জাতি ও গণমানুষের চেতনার পরিপন্থী, জাতীয় ঈদগাহের দেয়াল ঘেঁষে থেমিস দেবীর মূর্তি স্থাপন অসঙ্গতিপূর্ণ,থেমিস দেবীর মূর্তি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম অবমাননাকর।
আর থেমিস দেবীর মূর্তিকে শাড়ি পড়িয়ে বঙ্গীয় রূপ দেয়ার অপচেষ্টা করা মানে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি চরম অবজ্ঞা করা।
মূর্তি স্থাপন করে প্রমাণ করা হয়েছে বাংলাদেশে ন্যায় বিচার নেই,থেমিস দেবীর মূর্তি থেকে একজন নিষ্ঠাবান পৌত্তলিকের সুর, দর্শন, বর্ণনা এবং আকুতি ধ্বণিত হয়েছে, থেমিস দেবীর মূর্তি থেকে মানুষ পথভ্রষ্টতার অনুপ্রেরণা পাবে।
থেমিস দেবীর মূর্তি জগতের সবচেয়ে বড় কুসংস্কার ঈদগাহর সম্মুখভাগে মূর্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ে ছুরি চালিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন- তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ দেশবাসীর শান্তি ও স্বস্তির জন্যেই প্রয়োজন। তাদের অমার্জনীয় এই পাপের দায় সরকার নিতে পারে না। কাজেই মূর্তি অপসারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও নন্দিত হচ্ছে।
জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চমৎকার এবং জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
আল্লাহর পক্ষে থেমিস দেবীর মূর্তি অপসারণের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন হতে পারে যে, বাংলাদেশের বিচার-ব্যবস্থায় এ যাবৎ কি ন্যায় বিচার ছিল না? এই মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের ভিত্তি স্থাপিত হলো (?) চেতনা-ব্যবসায়ী এই জনবিচ্ছিন্ন লোকদের অশালীন ও ভ্রান্ত উক্তি এবং উস্কানিমূলক বক্তব্যের ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে চাই না। শুধু প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের পর দশকের পর দশক ধরে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ দেবীমূর্তি থেকে মুক্ত ও পবিত্র থাকাটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ছিল? জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদী ব্যাপার ছিল? স্বাধীনতার পর যারা ক্ষমতায় এসেও মূর্তি স্থাপন করেননি তারা সবাই কি জঙ্গি-মৌলবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী ছিলেন?
আর এতবছর পর যারা ‘ন্যায়বিচারের প্রতীক’ নামে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করলেন তারা কি তাদের ঐ সকল পূর্বসূরীর চেয়েও বড় চেতনাধারী হয়ে গেলেন?
লেখক পরিচিতি: মুফতী ফয়জুল্লাহ, গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ, মহাসচিব ইসলামী ঐক্যজোট