সৌভাগ্যের রজনী লাইলাতুল বরাত। এ রজনীতে আল্লাহতায়ালা বান্দার রিজিক বিলি-বণ্টন করেন। আল্লাহতায়ালা পাপী-তাপী বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়ে বেহেশতি বান্দাদের দলভুক্ত করে নেন এ রজনীতে। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখে তোমরা দিনের বেলায় রোজা রাখবে এবং রাতের বেলায় ইবাদত বন্দেগির মধ্যে কাটাবে। ওই দিন আল্লাহ পাক কুদরতিভাবে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আছে কি? ক্ষমা চাইলে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। রোগাক্রান্ত কেউ আছে কি? আমি আরোগ্য দান করব, কেউ রিজিক চাওয়ার আছ কি? আমি তাকে রিজিক দান করব। এভাবে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সালাতুল ফজর পর্যন্ত বিশেষ ঘোষণা আসতে থাকে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)।
লাইলাতুল বরাত উদযাপন নিয়ে কেউ কেউ এভাবে প্রশ্ন উত্থাপন করেন যে, লাইলাতুল বরাত বলে কোরআন ও হাদিসে কিছু নেই। প্রশ্নের উত্তর হল, ‘নামাজকে’ যেভাবে কোরআন ও হাদিসে ‘সালাত’ শব্দ দিয়ে খুঁজতে হয় তেমনি ‘শবেবরাত’ কে ‘লাইলাতুম মিন নিসফি শাবান’ শব্দ দিয়ে খুঁজতে হবে। লাইলাতুল বরাত শব্দটি বাংলাদেশ তথা এ উপমহাদেশে শবেবরাত হিসেবে পরিচিত। কোনো কোনো দেশে লাইলাতুল বরাতকে লাইলাতুল মুবারাকাহ অর্থাৎ বরকতময় রজনী হিসেবে পালন করা হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওয়া লাকাদ আরসালনা মুসা বি আয়াতিনা-আন আখরিজ ক্বাওমাকা মিনাজ জুলুমাতি ইলান নূরী; ওয়া জাক্কির হুম বিআইয়্যা-মিল্লাহহি; ইন্নাফি জালিকা লা আয়াতিল লিকুল্লি সাব্বারিন শাকুর।’ (সূরা ইব্রাহিম : ৫)। অর্থ : মূসাকে আমি আমার নিদর্শনগুলোসহ পাঠিয়ে বলেছিলাম, তোমার জাতিকে অন্ধকার থেকে মুক্ত কর; এবং তাদেরকে অতীতের (বিশেষ) দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দাও; পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞত ব্যক্তির জন্য; নিশ্চয়, এতে নিদর্শন রয়েছে। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘ওয়া ইজ তাআজ্জানা রাব্বুকুম লাইন শাকারতুম লাআযিদান্নাকুম ওয়ালাইন কাফারতুম ইন্না আজাবি লাশাদিদ।’ (সূরা ইব্রাহিম: ৭)। অর্থ : স্মরণ কর, তোমাদের রব ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই নেয়ামত বাড়িয়ে দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।
লাইলাতুল বরাতের মর্যাদা লাভের জন্য দিনের বেলায় নফল রোজা রাখা, ফরজ নামাজের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা, রাতের বেলায় তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করা, দরূদ পড়া, জিকির করা, আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, এতিম দুস্থদের সাহায্য করা, রোগী দেখতে যাওয়া ও বিপদাপন্ন প্রতিবেশীকে সহযোগিতা করা উত্তম। সুনানে বায়হাকি শরিফ ৩/৩১৯ এ বান্দার দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে পাঁচটি বিশেষ রাতের বিষয় উল্লেখ হয়েছে। পাঁচটি রাতের প্রথমটি হল জুমার রাত, ২য় হল ঈদুল ফিতরের রাত, ৩য় হল ঈদুল আজহার রাত, ৪র্থ হল রজব মাসের চাঁদ উদয়ের রাত, ৫ম হল মাহে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত।
কাবা শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করলে আল্লাহর দরবারে কবুল হয় এবং গুনাহ মাফ হয়। কোনো মুসাফির কারো জন্য দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। জুমার দিনে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। হাজী সাহেবদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় দোয়া করলে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। রমজান মাসে নফল নামাজ আদায় করলে কিংবা দান-সাদকা করলে এর সওয়াব সাত গুণ থেকে বাড়িয়ে সত্তর গুণ পর্যন্ত বান্দার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়। উল্লেখ্য, এখানে প্রত্যেকটি ঘটনাই ক্ষমা লাভের ‘উসিলা’ কিংবা উপায় মাত্র। লাইলাতুল বরাতও মুক্তির লাভের বিশেষ একটি ‘উসিলা’ মাত্র। লাইলাতুল বরাতের পরিপূর্ণ বরকত ও ফায়েজ লাভ করার জন্য আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুক।