শাপলা চত্বরের নির্মম ট্রাজেডির পরের দিন তিনজন কিশোরকে আমি ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় পেয়েছিলাম খিলগাওয়ে একটি গলির ভেতরে।
একজনের পায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা। দুইজনের পায়ে স্যান্ডেল নেই। বসে কাদছে। জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম চাঁদপুর থেকে এসেছিল হুজুরের সাথে। এখন হারিয়ে গেছে।
ওখানে একজন ডাক্তার সাহেবের ফার্মেসি ছিল। তিনি এগিয়ে এসে ওদের ট্রিটমেন্ট করলেন এবং তার বাসায় নিয়ে গেলেন। পরে জেনেছিলাম তিনি ওদেরকে একদিন রেখে পরেরদিন চাদপুরের লঞ্চে তুলে দিয়েছিলেন।
একজন বয়োবৃদ্ধ আলেমকে পেয়েছিলাম পুরান ঢাকায়। নিজের দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন শাপলায়। রাতে গুলিবৃষ্টি শুরু হলে বড় ছেলেটি কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তিনি ছোটটির হাত ধরে কোনমতে পালিয়ে আসেন। এখন বাড়ি যাবেন কিভাবে একজনকে রেখে?
তিনি বলেছিলেন এইসব ঢাকার রাজপথ আমাদের মত গরীবদের জন্য নয়। এটা ধনীদের শহর। আমরা আবার গ্রামে ফিরে যাব।
উনি গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন।
চাদপুরের তিন মাদ্রাসা পড়ুয়া কিশোরও গ্রামে ফিরে গিয়েছিল।
আল্লামা আহমদ শফিও হাটহাজারীতে তার গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন।
শুধু আমরা যারা খুব নষ্ট মানুষ, যারা অব্যাহত প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করতে করতে পচে গেছি আমরাই রয়ে গেছিলাম।
আল্লামা আহমদ শফিকে যে শর্তে ফেরত পাঠানো হয়েছিল তার অন্যতম ছিল আর কখনো যেন ঢাকামুখি না হন।
আল্লাহর কি অসীম কুদরত সেই গ্রামের অশিক্ষত (?) মানুষগুলোকেই যারা তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তারাই দাওয়াত করে নিয়ে এলেন। যদিও রাজনিতির জন্য নয় অন্য প্রয়োজনে।
এখানেই দ্বীনি কাজ এবং খুলুসিয়তের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
আমার কাছে মনে হয় এবার কওমি স্বীকৃতি নেয়ার জন্য উলামায়ে কেরামের ভুমিকাটা যথেষ্ট দুরদর্শী ও যথার্থ হয়েছে।
প্রয়োজন শুধু ইস্তেকামাত ও দৃঢ়তা। প্রচলিত রাজনীতি নয় দ্বীন ও ঈমানের জন্য রাজনীতির হিসেব নিকেশ না করে ময়দানে নেমে পড়া।
হেফাজত দেখিয়ে দিয়েছে দল নামক খুপড়িতে না ঢুকেও আন্দোলন কিভাবে করা যায়।
খুব স্বাভাবিক, যারা চেয়েছিলেন হেফাজত মাছ ভাজি করবে আর উনারা এসে তা ভক্ষণ করবেন, তারা ক্ষেপে যাবেন।
ঘটনা তাইই হয়েছে। তারা এখন প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত।
আগামী দিনে ৫ই মে শাপলাচত্বর শাহাদাত দিবস এবং ৬ ই মে বালাকোট শাহাদাত দিবস, দুইটি দিবস ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবে উলামায়ে কেরামের বিপ্লবী আন্দোলনের স্মারক হিসেবে।
যতই সেক্যুলার এবং সুবিধাবাদী রাজনীতিকরা আলেমদের বিরোধিতা করুক, যতই গেয়ো বলে বিদ্রুপ করুক জাতির প্রয়োজনেই উলামায়ে কেরামকে বারবার ফিরে আসতে হবে।
ফিরে আসতে হবে এই নষ্ট শহরে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে।